হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) - শরণার্থী থেকে কোটিপতি হওয়া এক সাহাবী\'র কাহিনী
আজ আপনাদের এমন একজন মানুষের কথা শুনাবো যিনি ছিলেন বিল গেটসে'র চেয়েও ৭ গুণ বেশি ধনী। তিনি ছিলেন একজন শরণার্থী। কিন্তু, নিজের সততা, অধ্যাবসায় আর বুদ্ধির জোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাফল্যের সুবর্ণ শিখরে। এই শিখরে উড্ডয়ন তাঁকে এনে দিয়েছিলো ৫২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম পরিমাণ সম্পদ। বর্তমানের বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটসের সম্পত্তি'র পরিমাণ কত জানেন কি? ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা ছিলো মাত্র ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাত্র! মাত্রই তো, এমন বিশাল সম্পদের সাথে তুলনা করলে তা সামান্যই!
প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন মক্কার একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। বাবা তাঁর মাঝে দেখেছিলেন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার সকল গুণ। বাবা'র ধারণাকে সত্য পরিণত করতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি তাঁর। হয়ে উঠেছিলেন সেই সময়ের ব্যবসায়ীদের সেনসেশন। অথচ, মক্কা থেকে যখন তিনি মদীনাতে শরণার্থী হিসেবে গেলেন, নিজের সব সম্পত্তি মক্কাতে ফেলে রেখে যেতে হয়েছিলো তাঁকে। হতদ্যম হননি তিনি। যাকে বলে একদম শুণ্য থেকে তাঁকে শুরু করতে হলেও জীবনের হারানো ঐশ্বর্য ফিরিয়ে এনেছিলেন খোদার উপর বিশ্বাস রেখে।
৬২২ সাল। আরবে তখন গ্রীষ্ম চলছে। প্রায় ৭০ জন মুসলমান মদীনাতে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের মাঝেই ছিলেন নিজের সকল সম্পদ মক্কাতে ফেলে আসা এই ব্যবসায়ী ব্যক্তিটি। হ্যাঁ, তিনি ছিলেন শেষ রাসূল (সাঃ)-এর একজন সাহাবী। মক্কাতে কুরায়েশদের অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তাঁকেও পাড়ি জমাতে হয়েছিলো মদীনাতে।
সেখানে তাঁর সাথে ভ্রাত্বিত্তের বন্ধনে আবদ্ধ হোন সা'দ ইবনে আর-রাবিয়াহ (রাঃ)। অন্যান্য আনসারদের মতো সা'দ (রাঃ)-ও নিজের সম্পত্তি আর স্ত্রীদের মাঝ থেকে একজনকে সেই ব্যবসায়ী মুহাজিরকে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। অথচ, সেই সেসব ফেরত দিয়ে কি উত্তর দিয়েছিলেন জানেন? তিনি বলেছিলেন,
''তোমার পরিবার আর সম্পদের উপর আল্লাহ'র রহমত বর্ষণ হোক। তুমি বরং আমাকে বাজারের পথটা দেখিয়ে দাও।''
এই সাহাবী কারো উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাননি। বরং, আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজের ব্যবসায়ীক জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজের রুটি-রুজি নিজেই জোগাড়ে লেগে গিয়েছিলেন।
তিনি যে বাজারের কথা বলছিলেন, তার নাম ছিলো 'কায়নুক্কা'। সেই বাজারে তিনি প্রথমে দৈ, তেল আর ঘি বেচা শুরু করলেন। প্রথম দিকে তাঁর বিনিয়োগ ছিলো দুই কি চার দিনার। এরপরে তিনি বুঝতে পারলেন বাজারে ঘোড়া'র চাহিদা বেশ। সাথে সাথে তিনি ঘোড়া বেচা-কেনার ব্যবসায় হাত দিলেন। এর কিছু দিন পরে লাভের সন্ধান পেয়ে ঘোড়ার জিনের ব্যবসায়ে হাত প্রসার করেন। যেহেতু, তিনি বিভিন্ন ধরণের পণ্যদ্রব্য, ঘোড়া এবং জিনের বিকিকিনি করতেন, অল্পদিনেই তাঁর ব্যবসায়ের বেশ প্রসার ঘটে। তিনি ব্যবসায়ী মহলে এতোটাই পরিচিত হয়ে উঠেন যে এমনকি যদি তিনি একটি পাথরও তুলতেন, আশা করা হতো তার নিচে স্বর্ণ পাওয়া যাবে!
যেসব নীতি মেনে চলার ফলে তিনি সাফল্যের উচ্চ শিখরে উঠতে পেরেছিলেন-
১) এই সাহাবী (রাঃ) সকল সময়ে নগদে কিনতেন, এবং নগদে বিক্রি করতেন।
২) কখনই বেশি লাভের জন্যে অপেক্ষা করতেন না, কোন পণ্য মজুদও করতেন না। এক পয়সা লাভ হলেও তিনি ব্যবসার পণ্য বেঁচে দিতেন।
৩) সব সময়ই ন্যায্য থাকতেন। নিজের পণ্যে ক্ষীণ পরিমাণ খুঁত থাকলেও তা তিনি খরিদদারের কাছে প্রকাশ করে দিতেন।
এই তিন নীতিই তাঁকে এতো পরিমাণ সম্পদ লাভে সহায়তা করেছিলো। তাঁর মৃত্যু'র সময় তাঁর সম্পদের পরিমাণ হয়েছিলো একশত তিন মিলিয়ন সোনার দিনার!
কে এই সাহাবী?
তিনি আর কেউ নন, আল্লাহর শেষ রাসূল (সাঃ)-এর অত্যান্ত কাছের মানুষ - হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)।