ইস্তেগফারের গুরুত্ব:
রাসূল (সা.) ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন (অথচ তিনি মা’সুম-নিষ্পাপ), হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করো। কারণ আমি নিজেও দৈনিক শতবার তাওবা-ইস্তেগফার করি।
অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন, যার আমলনামায় ইস্তেগফার অধিক সংখ্যায় পাওয়া যাবে তার জন্য রইল সুসংবাদ।
হযরত লোকমান হাকীম তাঁর সন্তানকে উপদেশ দান করে বলেন, হে আমার পুত্র! ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলী’ বলাকে অভ্যাসে পরিণত করে নাও। কারণ এমন কিছু সময় আছে যখন আল্লাহ তা’আলা যেকোনো দু’আকারীর দু’আ কবুল করেন।
হযরত আবু মূসা (রা.) বলেন, আমাদের সুরক্ষাদানকারী দুটি জিনিস ছিল, তন্মধ্যে হতে একটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। সেটা হলো আমাদের মাঝে রাসূল (সা.)-এর উপস্থিতি। আর দ্বিতীয় জিনিস ইস্তেগফার যা এখনো আমাদের মাঝে রয়ে গেছে। যেদিন এটিও চলে যাবে (করার মতো কেউ থাকবে না) তখন আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
হযরত হাসান (রহ.) বলেন, তোমরা ঘরে-দুয়ারে, দস্তরখানে, রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে, সভা-সমাবেশে বেশি বেশি ইস্তেগফার করো। কারণ ইস্তেগফার কবুল হওয়ার সময় তোমাদের জানা নেই।
কোরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসতেগফারের ফজিলত
১. গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
২. ইসতেগফারের মাধ্যমে বালা-মুসিবত দূর হয়।
৩. রিজিক প্রশস্ত হয়।
৪. পরিবারে শান্তি আসে।
৫. শরীরে ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৬. হৃদয় স্বচ্ছ ও নির্মল হয়।
৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
৮. চিন্তা পেরেশানি দূর হয়।
৯. রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়।
১০. সুসন্তান লাভ হয়।
১১. নদী-নালা প্রবাহিত হয়।
১২. সম্মানিতদের সম্মান বৃদ্ধি হয়।
১৩. আজাব-গজব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৪. মুস্তাজাবুদ দাওয়ার গুণ অর্জন হয়। অর্থাৎ ইসতেগফারকারী এমন হয়ে যাবেন, যখন তিনি কোনো দোয়া করবেন, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন।
১৫. পরকালে জান্নাত লাভ হয়।
কীভাবে ইসতেগফার করবেন
১. أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন।' (মিশকাত)
২. أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।' (বুখারি)
৩. رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'
অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তওবা কবুলকারী করুণাময়।'
নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
৪. أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'
অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তওবাহ করে) ফিরে আসি।'
নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।' (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
৫. সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَىعَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُلَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُالذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'
অর্থ : 'হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।'
নিয়ম : সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।' (বুখারি)
৬. رَبِّغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির, ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
৭. অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ৭০ বার-এর অধিক আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তওবা করি-
اَسْتَغْفِرُ الله وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি’
৮. বিশেষ করে ক্ষমা, রিজিকের সন্ধান ও বরকত পেতে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
رَبِّ اغْفِرْلِىْ ذُنُوْبِىْ وَافْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফিরলি জুনুবি, ওয়াফতাহলি আবওয়াবা ফাদলিকা’
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও; আর আমার জন্য তোমার অনুগ্রহের দরজা খুলে দাও।’ (তিরমিজি)
৯. اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।'
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
১০. اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اِنَّ اللهَ غَفُوْرُ الرَّحِيْم
উচ্চারণ : 'আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।'
অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার করা। রিজিকে বরকতসহ কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদাগুলো পাওয়ার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে বেশি বেশি ইসতেগফারের আমল করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন