যিনা বা জিনা---৩



কুরআনে লুতের সম্প্রদায়ের ঘটনার মাধ্যমেও পুরুষ সমকামী পায়ুসঙ্গমকে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৩]মুহাম্মদ তার অনুসারীদের মাঝে লূত-এর অধীনস্থ সডোম ও গোমরাহ সম্প্রদায়ের এই সকল "সীমালঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড" ছড়িয়ে পড়ার ব্যপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনুসারীদের মাঝে এসব কর্মে জড়িত ব্যক্তিদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। আবু বকর তার খিলাফতের সময় এ ধরনের ব্যক্তিদের উপর দেয়াল ধ্সিয়ে দিতেন এবং আলী(রা) তার খিলাফতের সময় এদের আগুনে পুড়িয়ে মারতেন।

ইসলামে বৈবাহিক মুখমৈথুনকে কিছু আইনবিদ মাকরুহ তাহরীমী[৪৪][৪৫] বা কঠোরভাবে বর্জনীয় বলে স্বাব্যস্ত করেছেন।[৪৬] এর পেছনে কারণটি কুরআন ও হাদিসে একে উৎসাহিত করা হয় নি সে কারণে নয়, বরং তা হল শালীনতা, পবিত্রতা (ইসলামে ধর্মীয় রীতিনীতিগত পবিত্রতা বা তাহারাত) ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক দ্বন্দ্ব।[৪৭] এর পেছনে সবচেয়ে সাধারণ দাবিটি হল,[৪৫] যে, মুখ এবং জিহ্বা কুরআন পঠন ও আল্লাহর স্মরণে ব্যবহৃত হয়, তাই তা অপবিত্রতায় ব্যবহার করা উচিত নয়।[৪৮] প্রথমত, মুসলিম পন্ডিতগণ মুখের মাধ্যমে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শকে বর্জ‌নীয় বলে বিবেচনা করেন, যার কারণ, বাম হাতের পরিবর্তে ডান হাতে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ করতে নবি মুহাম্মাদ নিষেধ করেছেন; তাদের মতে যেহেতু মুখ ডান হাতের তুলনায় অধিক সম্মানিত, সেই হিসেবে মুখের মাধ্যমে গুপ্তাঙ্গ স্পর্শ অধিক ঘৃণ্য ও বর্জনীয়। দ্বিতীয়ত, চারটি সুন্নি মাজহাবের পণ্ডিতগণের মধ্যে বীর্য নিঃসরণ পবিত্র কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কিছু পণ্ডিত একে অপবিত্র মনে করেন এবং কিছু পণ্ডিত করেন না।

সমকামিতাসম্পাদনা

ইসলামে কোন পুরুষের সঙ্গে পুরুষের বা নারীর সঙ্গে নারীর বিবাহ হতে পারে না। তাই সমকামিতা বা একই লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম যিনার অন্তর্ভুক্ত। কুরআন সমলিঙ্গীয় যৌন সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করেছে, সূরা আন-নিসা, সূরা আল-আরাফ (লূতের জনগণের ঘটনার মাধ্যমে), এবং অন্যান্য সূরায়। উদাহরণস্বরূপ,[৯][৪৯]

আমি লুতকেও পাঠিয়েছিলাম: সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল: "তোমরা কি এমন কুকর্ম করবে যা সৃষ্টিজগতে তোমাদের পূর্বে এর আগে কখনো কেউ করেনি? কারণ তোমরা নারীদের পরিবর্তে পুরুষের দ্বারা নিজেদের কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ কর: তোমরা তো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।"

আরেকটি আয়াতে, মুহাম্মদ লুতের স্বীকারোক্তিকে নির্দেশ করা হয়েছে,

তোমরা কি পৃথিবীর পুরুষদের প্রতি অগ্রসর হও এবং তোমাদের প্রভু যাদেরকে সঙ্গিনী হিসেবে বানিয়েছে তাদেরকে (নারীদেরকে) ত্যাগ করো? তোমরা তো এমন এক সম্প্রদায় যারা সীমালঙ্ঘন করছে।

— কুরআন ২৬:১৬৫–১৬৬, অনুবাদ. সহিহ ইন্টারন্যাশনাল

কিছু ইসলামি পণ্ডিত নিম্নোক্ত আয়াতকে কুরআনে প্রদত্ত সমকামিতার শাস্তি হিসেবে নির্দেশ করেছেন:

“যদি তোমাদের মধ্যে দুইজন (পুরুষ) কুকর্মের জন্য দোষী প্রমাণিত হয়, তবে তাদের উভয়কে শাস্তি দাও। যদি তারা অনুতপ্ত হয় এবং সংশোধিত হয়, তবে তাদেরকে ছেড়ে দাও; কারণ নিশ্চয় আল্লাহ অনুতাপ-গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। ”

— কুর'আন, সূরা ৪ (আন-নিসা), আয়াত ১৬[৫০]

তবে অনেক পণ্ডিত উক্ত আয়াতের "তোমাদের মধ্যে দুইজন" বলতে ব্যাভিচারী নারী ও পুরুষ হিসেবে ব্যখা করেছেন।

হাদিসে সমলিঙ্গীয় যৌনকর্মকে যিনা বলে গণ্য করা হয়েছে, এবং পুরুষ সমকামিতার শাস্তি হিসেবে হত্যা করতে বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে,[৪৯][৫১]

আবু মুসা আল আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ বলেছেন: "যদি কোন মহিলার উপরে কোন মহিলা উপস্থিত হয়, তবে তারা উভয়ই ব্যভিচারিনী, যদি কোন পুরুষ অপর পুরুষের উপর আসে, তবে তারা দুজনেই ব্যভিচারী।"

— আল-তাবারানী, আল-মুযাম আল-আওত: ৪১৫৭, আল-বায়হাকী, শুআব আল-ইমান: ৫০৭৫

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন: মুহাম্মদ বলেছেন: তোমরা যদি লূতের সম্প্রদায়ের কর্মে লিপ্ত কাওকে খুঁজে পাও,[৫২] হত্যা কর তাকে যে এটি করে, এবং তাকে যার উপর এটি করা হয়।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ বলেছেন: কোন অবিবাহিত পুরুষ যদি লিওয়াত/সডোমিতে (পায়ুমৈথুনে/পুংমৈথুনে) লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে, তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হবে।

আল-নুয়ায়রি (১২৭২–১৩৩২) তার নিহায়া গ্রন্থে উদ্ধৃত করেন যে মুহাম্মাদ বলেছেন তিনি তার সম্প্রদায়ের জন্য লুতের জণগণের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন (মদ ও নারীর ছলনার ব্যাপারে তিনি সমতুল্য ধারণা পোষণ করেছেন বলে মনে করা হয়। )।[৫৩]

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, জাবিরকে আমি বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লুত সম্প্রদায়ের কুকর্ম।

— তিরমিজি:১৪৫৭, ইবনু মা-জাহ: ২৫৬৩

এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। আমরা শুধুমাত্র আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল ইবনু আবূ তালিব হতে জাবিরের সূত্রেই হাদীসটি এভাবে জেনেছি। ১৪৫৭

ইসলামে সমকামিতার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে পুরুষদের মধ্যকার কর্মকাণ্ড নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে; ফুকাহাগণ (ইসলামি আইনবিদ) এব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে "নারী সমকামিতার জন্য কোন হুদুদ শাস্তি নেই, কারণ এটি যিনা নয়। তবে একটি তাজির শাস্তি অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে, কারণ এটি একটি পাপ..'".[৫৪] কিছু আইনবিদ মনে করেন যৌনসঙ্গম একমাত্র সে ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব যার শিশ্ন বা শিশ্নের ন্যায় নিম্নাঙ্গ আছে;[৫৫] তাই যৌনমিলনের উক্ত সংজ্ঞানুযায়ী এটি সঙ্গীর ছিদ্রপথে ন্যূনতম পরিমাণ হিসেবে অন্ততপক্ষে শিশ্নাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করানোর উপর নির্ভরশীল।[৫৫] যেহেতু নারীদের শিশ্ন বা অণুরূপ কোন নিম্নাঙ্গ নেই এবং একে অপরের ছিদ্রপথে অঙ্গ সঞ্চালনে সক্ষম নয়, তাই উক্ত সংজ্ঞানুযায়ী তারা একে অপরের সঙ্গে শারীরিকভাবে যিনায় লিপ্ত হতে অক্ষম বলে গণ্য হয়।[৫৫]


অজাচারসম্পাদনা

অজাচার হলো মাহরাম বা এমন ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম যার সঙ্গে রক্ত-সম্পর্ক থাকার দরুণ বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। যার সঙ্গে বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম যিনার অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে অজাচারকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অজাচারীকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইবনে আবাস হতে বর্ণিত: যে মুহাম্মদ বলেছেন: "যদি কোন লোক আরেক লোককে বলে: 'ওহে ইহুদী' তবে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো। যদি সে বলে: 'ওহে হিজড়া' তাহলে তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করো। আর কেও যদি মাহরাম (আপন পরিবারে সদস্য বা রক্ত সম্পর্কের অবিবাহযোগ্য আত্মীয়) ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক করে তবে তাকে হত্যা কর।"

 


পশুকামসম্পাদনা

ইসলামে কোন পশুর সঙ্গে মানুষের বিবাহ হতে পারে না। তাই পশুসঙ্গম যিনার অন্তর্ভুক্ত। পশুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এই কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ও ব্যবহৃত পশু উভয়কে হাদিসে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত: আল্লাহর রাসুল বলেছেন: "তোমরা যদি পশুর সাথে সঙ্গমরত কাওকে খুঁজে পাও তবে তাকে এবং ওই পশুকে হত্যা করবে।" ইবনে আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল: "পশুটির কি দোষ?" তিনি বললেন: "আমি আল্লাহর রাসুলকে এ সম্পর্কে কিছু বলতে শুনিনি , কিন্তু আমার মতে ওই পশুর সাথে এরূপ জঘন্য অপকর্ম সঙ্ঘটিত হওয়ার কারণে আল্লাহর রাসুল উক্ত পশুর মাংস খেতে বা তা ব্যবহার করা পছন্দ করেননি।"

যিনা বা জিনা---৩ যিনা বা জিনা---৩ Reviewed by Adam Blog on April 21, 2023 Rating: 5

দান সদকা

statistics

Search This Blog

Subscribe

Powered by Blogger.